Sunday, 22 December 2024

XI-2ND SEM-ENGLISH -JIMMY VALENTINE

 

Jimmy Valentine

O. Henry
কারাগারের জুতো তৈরির কারখানায় যেখানে জিমি অত্যন্ত পরিশ্রম ও যত্নসহকারে জুতোর ওপরের অংশ সেলাই করছিল, সেখানে একজন রক্ষী এল এবং পাহারা দিয়ে জিমিকে কারাগারের সামনের অফিসে নিয়ে গেল। সেখানে কারাধ্যক্ষ জিমির হাতে ক্ষমা প্রদর্শন পত্রটি তুলে দিলেন যেটিতে সেদিনই সকালে গভর্নর স্বাক্ষর করেছেন। জিমি ক্লান্তভঙ্গিতে সেটা নিল । সে চার বছর কারাদণ্ডের মেয়াদের প্রায় দশ মাস ইতিমধ্যেই জেলে কাটিয়েছে। সে আশা করেছিল, তাকে বড়োজোর মাস তিনেক জেলে কাটাতে হবে। জিমি ভ্যালেনটাইনের মতো ব্যক্তি, বাইরে যার প্রচুর বন্ধুবান্ধব আছে, যখন জেলখানায় ঢোকে, তখন তার কেশাগ্র স্পর্শ করা সত্যিই সম্ভব নয়। কারাধ্যক্ষ বলেন, “তাহলে, ভ্যালেনটাইন, সকালেই তুমি বাইরে যাচ্ছ। মনে জোর আনো, নিজেকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলো। আদতে লোকটা তুমি খারাপ নও। সিন্দুক-টিন্দুক ভাঙা বন্ধ করো। সিধে জীবন কাটাও।বিস্ময় প্রকাশ করে জিমি বলল, “আমি? কই, আমি তো জীবনে একটা সিন্দুকও ভাঙিনি।” “আরে না, না,” কারাধ্যক্ষ হেসে ফেললেন, “নিশ্চয়ই নয়। তবে চলো, একবার দেখে নেওয়া যাক। আচ্ছা, এটা কীভাবে সম্ভব হল? স্প্রিংফিল্ডের ঘটনায় তোমাকে জেলে পোরা হল কী করে? তাহলে কি, সমাজের উঁচুস্তরের কোনো মানুষের বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কায় তুমি নিজের নির্দোষিতার পক্ষে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ দাওনি? নাকি, এটা নীচ মানসিকতাসম্পন্ন কোনো বুড়ো জুরির কারসাজি যে তোমাকে দোষী বানিয়ে সাজা দেওয়া হল। সব সময়ই তোমাদের মতো নিরপরাধ ব্যক্তি কোনো-না- কোনো কারণে অভিযোগের শিকার হয়।তখনও নিছক সাধুতার ভান করে জিমি বলল, “আমি! কেন কারাধ্যক্ষ মশাই, জীবনে কখনও আমি স্প্রিংফিল্ডে যায়নি।
কারাধ্যক্ষ বললেন, “ক্রোনিন, ওকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। আর ওকে বাইরে যাওয়ার পোশাক-আশাক পরিয়ে দিও। কাল সকাল সাতটায় ওকে তালা খুলে আমার অফিসে নিয়ে এসো। ঠিক আছে ভ্যালেনটাইন, আমার উপদেশটা একটু ভেবে দেখো।পরের দিন সকালে সওয়া সাতটায় জিমি কারাধ্যক্ষের বাইরের অফিসে এসে দাঁড়াল। তার পরনে বেয়াড়া রকমের বেখাপ্পা সস্তা রেডিমেড সুট, পায়ে শক্ত ক্যাচক্যাচ আওয়াজ তোলা জুতো, যেগুলো সরকারের তরফ থেকে তার বাধ্যতামূলক অতিথিদের ছাড়া পাওয়ার পর বরাদ্দ করা হয়। কেরানিটি তার হাতে একটি রেলে ভ্রমণের টিকিট এবং একটি পাঁচ ডলারের নোট তুলে দিল যেগুলির সাহায্যে, আইন রক্ষকেরা মনে করেন যে, সে সুনাগরিকত্ব ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিজের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হবে। কারাধ্যক্ষ তাকে একটা চুরুট দিয়ে তার সঙ্গে করমর্দন করলেন। জেলের রেজিস্টারে গভর্নর কর্তৃক ক্ষমাপ্রাপ্তভ্যালেনটাইন, কয়েদি নম্বর ৯৭৬২, এই মর্মে তথ্যাদি নথিভুক্তির পর, মিঃ জেমস ভ্যালেনটাইন, জেল থেকে বেরিয়ে রোদঝলমলে বাইরের জগতে পা রাখল। পাখিদের গান, সবুজ গাছেদের হিল্লোল এবং ফুলের সুগন্ধকে উপেক্ষা করে জিমি সোজা রওনা দিল এক রেস্তোরাঁর উদ্দেশে। সেখানে সাদা ওয়াইন নামের এক ধরনের মদ সহযোগে ঝলসানো মুরগির মাংসের মাধ্যমে সে তার স্বাধীনতার প্রথম স্বাদটুকু উপভোগ করল। তারপর সে একটা চুরুট সেবন করল যার স্বাদের মান কারাধ্যক্ষের দেওয়া চুরুটটার চেয়ে এক ধাপ উঁচুতে। সেখান থেকে হেলতে দুলতে সে এগিয়ে গেল রেলস্টেশনের দিকে। স্টেশনের দরজার পাশে বসে থাকা এক অন্ধ মানুষের টুপিতে সে আলতো করে একটা সিকি ডলার ছুঁড়ে দিল এবং তার ট্রেনে চাপল। তিন ঘণ্টা বাদে দুই প্রদেশের সীমানাবর্তী একটি ছোটো শহরে এসে সে নামল। সে জনৈক মাইক ডোলানের কফিখানায় গেল এবং মাইকের সঙ্গে করমর্দন করল, যে তখন বারের পিছনে একা ছিল। দুঃখিত, জিমি, আমরা ব্যাপারটা এর চেয়ে আগে মেটাতে পারিনি,” মাইক বলল, “কিন্তু স্প্রিংফিল্ড থেকে সরাসরি প্রতিবাদের বিরোধিতার মুখে আমরা পড়েছিলাম, আর গভর্নর তো প্রায় বেঁকে বসেছিলেন। যাই হোক, ভালো আছ তো?” “খুব ভালো,” জিমি বলল ৷ তা, আমার চাবিটা আছে?” সে তার চাবিটা নিল এবং পেছনের দিকে একটা ঘরের তালা খুলে ওপরতলায় গেল। যেমন অবস্থায় সে ঘরটাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল, প্রতিটি জিনিস ঠিক সেই একইরকম আছে। মেঝের ওপর তখনও পড়েছিল বেন প্রাইসের জামার কলারের বোতামটা যেটা বিখ্যাত গোয়েন্দাটির শার্টের ব্যান্ড থেকে খসে পড়েছিল জিমিকে গ্রেফতার করার জন্য তার সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়। দেয়াল থেকে একটা ভাঁজ করা বিছানা টেনে এনে জিমি দেয়ালের প্যানেল সরিয়ে টেনে-হিঁচড়ে একটা ধুলোয় ঢাকা সুটকেস বের করে আনল। সুটকেসটা খুলে পরম মমতাভরা দৃষ্টিতে সিন্দুক-ভাঙা চোরের প্রয়োজনীয় প্রাচ্যের সবচেয়ে সুন্দর যন্ত্রপাতির সেট-এর দিকে তাকাল। এটা ছিল সবদিক থেকে সম্পূর্ণ একটা সেট, যা বিশেষভাবে শান দেওয়া ইস্পাতের তৈরি, তুরপুনের নয়া সংস্করণ, ছিদ্রকারী যন্ত্র, তুরপুনের ফাল, শাবল, কব্‌জা, ভোমর আর জিমির নিজের উদ্ভাবিত কয়েকটি অভিনব সরঞ্জাম, যেগুলো নিয়ে তার নিজের খুব গর্ব ছিল। ওই যন্ত্রগুলো বিশেষ এক জায়গায়, যেখানে এই পেশার জিনিসপত্র বানানো হয়, সেখানে বানাতে জিমির নশ ডলারেরও বেশি খরচা হয়েছিল। আধঘণ্টার মধ্যে জিমি নীচের তলায় নেমে কফিখানায় ঢুকল। এখন সে রুচিসম্মত এবং মানানসই পোশাকে সজ্জিত। তার হাতে ছিল ঝাড়ামোছা করা তার সুটকেসটা। কি, কাজটাজ কিছু জুটল নাকি?” মাইক অমায়িকভাবে জিজ্ঞাসা করল। হকচকিয়ে যাওয়ার ঢঙে জিমি বলল, “আমাকে বলছেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি নিউ ইয়র্ক অ্যামালগ্যামেটেড শর্ট স্ন্যাপ-বিস্কিট ক্র্যাকার অ্যান্ড ফ্র্যাজেলড্ হুইট কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছি।জিমির এই বক্তব্যে মাইক এত আহ্লাদিত হল যে জিমিকে ওখানে দাঁড়িয়েই এক পাত্র সেলজার ও দুধ মেশানো পানীয় খেতে হল। সে কখনও মদ ছুঁত না। কয়েদি নম্বর ৯৭৬২ ভ্যালেনটাইনের মুক্তিলাভের এক সপ্তাহ পর, ইন্ডিয়ানার রিচমন্ডে খুব নিখুঁতভাবে সিন্দুক ভেঙে চুরির একটি ঘটনা ঘটল। কে করল তার কোনো হদিশ পাওয়া গেল না। মাত্র শআষ্টেক ডলার পড়ে রইল। এর দু-সপ্তাহ বাদে একটি উন্নতমানের, পেটেন্টপ্রাপ্ত, চুরি প্রতিরোধক সিন্দুক ভাঙা হল লোগানস্পোর্টে যেন সিন্দুক নয়, মসৃণভাবে কেউ পনির কেটেছে এমনভাবে। অর্থের পরিমাণ নগদ পনেরোশো ডলার। অবশ্য বন্ধকি দলিল, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি আবশ্যকীয় দলিল এবং রুপোয় হাত পড়েনি। এই ঘটনাটি দুষ্ট দমনকারীদের নজর কাড়ল। তারপর জেফারসন শহরে একটা ব্যাংকের সেকেলে ধরনের সিন্দুক হঠাৎই সক্রিয় হয়ে উঠে তার গহ্বর থেকে ব্যাংকে নোট উদ্‌গিরণ করতে শুরু করল যার পরিমাণ পাঁচ হাজার ডলার। এবার ক্ষতির মাত্রা এতটাই বেশি যে বেন প্রাইসের মতো উঁচু জাতের দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির নজরে বিষয়টা নিয়ে আসতেই হল। নোটগুলি তুলনা করে চুরির পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য লক্ষিত হল। বেন প্রাইস লুঠের অকুস্থলগুলিতে তদন্ত চালালেন এবং তাঁকে বলতে শোনা গেল: এ যে দেখছি ফুলবাবু জিমির স্বাক্ষর। সে আবার তার কাজ শুরু করেছে। সংকেতসূত্র বিশিষ্ট হাতলগুলি লক্ষ করুনযেন স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় মাটি থেকে মুলো উপড়েছে, এমন মসৃণভাবে কাজগুলো সারা হয়েছে। আরও দেখুন কত নিখুঁতভাবে তালার ভেতরের কলকব্‌জাগুলো ফুটো করে অকেজো করা হয়েছে। জিমিকে কখনও একটার বেশি ফুটো করতে হয় না। হ্যাঁ, আমার অনুমান, মি. ভ্যালেনটাইনকে আমার চাই। এবারে যখন সে জেলের ঘানি টানবে তখন স্বল্পকালের মেয়াদ বা ক্ষমা প্রদর্শনের মতো কোনো বোকামি আর নয়।
বেন প্রাইস জিমির স্বভাব ও অভ্যাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। স্প্রিংফিল্ড-এর কেসটি নিয়ে কাজ করার সময় তিনি এ সম্বন্ধে জানতে পারেন। লম্বা লাফ, দ্রুত চম্পট, কাজে কোনো সঙ্গী না রাখা, সভ্য সমাজে মেলামেশা করার বাসনা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলি তাকে সুকৌশলে কঠোর সাজা এড়াতে সাহায্য করেছে। বেন প্রাইস যে সিন্দুক ভাঙার অধরা ওস্তাদটিকে পাকড়াও করার দায়িত্ব নিয়েছেন, এ কথা যখন জানাজানি হল, চুরি নিরোধক সিন্দুকের মালিকরা তখন অনেকটা স্বস্তিবোধ করলেন।

একদিন বিকেলে জিমি ভ্যালেনটাইন তার সুটকেস নিয়ে রেলস্টেশন থেকে ভিতরে পাঁচ মাইল দূরে তাসের জুয়াড়িদের দেশ আরকানসাস প্রদেশের ছোটো শহর এলমোরে ঘোড়ায় টানা ডাকগাড়ি থেকে নামল। জিমি, যাকে দেখাচ্ছিল কলেজ থেকে সদ্য বাড়ি ফিরেছে এমন এক তরুণ অ্যাথলিটের মতো, ফুটপাথের এক পাশ ধরে এগিয়ে গেল হোটেলের দিকে। এক যুবতি মহিলা রাস্তা পার হয়ে রাস্তার একটা কোণে তার পাশ দিয়ে চলে গেল এবং একটা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল, যে দরজার মাথায় সাইনবোর্ডে লেখা, ‘দ্য এলমোর ব্যাংক। মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে জিমি ভুলে গেল সে কে এবং সে সম্পূর্ণ নতুন এক মানুষে পরিণত হল। মেয়েটি তার চোখ নামিয়ে লজ্জায় স্বল্প লাল হয়ে উঠল। জিমির মতো আদবকায়দা জানা সুদর্শন যুবক এলমোরে বিরল। জিমি ব্যাংকের সিঁড়ির ওপর ঘুরঘুর করতে থাকা একটা ছেলেকে চেপে ধরল, যে এমন হাবভাব করছিল যেন সে ওই ব্যাংকে অংশীদারদের একজন, এবং তাকে সে শহরটা সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করল কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে দশ সেন্টের পয়সা তার হাতে গুঁজে দিতে দিতে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই যুবতিটি বাইরে চলে এল এবং সুটকেস হাতে যুবকটিকে রাজকীয় উপেক্ষা প্রদর্শন করে নিজের গন্তব্যের দিকে রওনা দিল। নিপুণ ছলনা ভরা কায়দায় জিমি ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছা, ওই যুবতি মহিলাটি পলি সিম্পসন না?” ছেলেটা জবাব দিল, “আরে না, না ৷ উনি হলেন অ্যানবেল অ্যাডামস্। ওঁর বাবা এই ব্যাংকের মালিক। আপনি এলমোরে এসেছেন কেন? আচ্ছা, ওই ঘড়ির চেনটা কী সোনার? আমি ভাবছি, একটা ডালকুকুর কিনব। দশ সেন্টের পয়সা আর আছে নাকি?” জিমি প্ল্যানটারস্হোটেলে গেল, র‍্যাফ ডি. স্পেনসার হিসেবে তার নাম নথিভুক্ত করে একটা ঘর ভাড়া নিল। ডেস্কের ওপর ঝুঁকে সে কেরানিটির কাছে তার কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণা করল। সে বলল যে সে এলমোরে এসেছে ব্যাবসায় নামার জন্য একটা জায়গার খোঁজে। অধুনা, শহরে জুতোর ব্যাবসার সম্ভাবনা কেমন? সে জুতোর ব্যাবসার কথা ভেবেছে। ওই ব্যাবসা চালানোর কোনো সুযোগ আছে কী? কেরানিটি জিমির পোশাক-আশাক ও আচার- আচরণে প্রভাবিত হল। সে নিজে ছিল এলমোরের ফোতোবাবুদের কাছে ফ্যাশন গুরুস্বরূপ, কিন্তু এখন সে নিজের খামতির কথা বুঝতে পারল। জিমির বিশেষ ধরনের টাই বাঁধার কায়দা বোঝার ফাঁকে সে আন্তরিকভাবে তথ্য সরবরাহ করতে লাগল।

হ্যাঁ, জুতোর ব্যাবসার লাইনে সুযোগ ভালোই আছে। শহরে আলাদাভাবে শুধু জুতোই বিক্রি হয় এমন কোনো দোকান নেই। শুকনো জিনিসপত্র এবং সবরকম মাল বিক্রি করে এমন দোকানগুলোই জুতো বিক্রির ব্যাবসাটাও সামলায়। সব লাইনেই ব্যাবসার সম্ভাবনা এখানে ভালো। সে আশা করে মি. স্পেনসার তাঁর ব্যাবসার কেন্দ্র হিসেবে এলমোরকেই বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বুঝবেন যে থাকার পক্ষে শহরটা মনোরম আর লোকজনও বেশ মিশুকে। মি. স্পেনসার ভাবল সে শহরে কয়েকটা দিন থেকে যাবে এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে। না, কেরানিটার হোটেলের বয়কে ডাকবার দরকার নেই, সে নিজেই নিজের সুটকেস বয়ে নিয়ে যাবে; এটা বেশ ভারী। জিমি ভ্যালেনটাইনের চিতাভস্ম থেকে উঠে আসা ফিনিক্স পাখি মি. র‍্যাফ স্পেনসার ভালোবাসার চকিত এবং রূপান্তরকারী অগ্নিশিখার দহনে ছাই হতে হতে এলমোরে থেকে গেল এবং উন্নতি করতে লাগল। সে একটা জুতোর দোকান খুলল আর তার ব্যাবসা ভালোই চলতে লাগল। সামাজিক প্রতিষ্ঠা লাভের ক্ষেত্রেও সে সফল হল এবং এবং বহু লোকের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হল। আর তার মনের ইচ্ছা পূরণেও সে সাফল্য অর্জন করল। মিস অ্যানাবেল অ্যাডামস-এর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হল। অ্যানাবেলের মাধুর্য তাকে আরও গভীরভাবে আবদ্ধ করল। বছর শেষে মি. র‍্যাফ স্পেনসারের অবস্থাটা দাঁড়াল এরকমসে জনসমাজের শ্রদ্ধা অর্জন করল। তার জুতোর দোকান রমরমিয়ে চলছে আর দুসপ্তাহের মধ্যে সে এবং অ্যানাবেল অ্যাডামস্ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে বলে স্থির হল। মার্কামারা অধ্যবসায়ী গ্রামীণ ব্যাংক ব্যবসায়ী মি. . অ্যাডামস্ স্পেনসারকে পছন্দ করলেন। তাকে নিয়ে অ্যানাবেলের গর্ব তার প্রতি অনুরাগেরই সমতুল। সে নিজে মি. অ্যাডামসের এবং অ্যানাবেলের বিবাহিতা দিদির পরিবারের সঙ্গে মেলামেশায় এতটাই স্বাছন্দ্য বোধ করত, মনে হত যেন ইতিমধ্যেই সে ওই পরিবারের একজন সদস্য হয়ে গেছে। একদিন জিমি তার ঘরে বসে এই চিঠিটা লিখল যেটা সে পাঠিয়ে দিল সেন্ট ল্যুইতে তার পুরোনো এক বন্ধুর নিরাপদ ঠিকানায়: বহুকালের প্রিয় দোস্ত : আগামী বুধবার রাত ন-টায় লিটল রকে স্যুলিভানের বাড়িতে আমি চাই তুমি হাজির থাকো। আমি চাই, আমার হয়ে তুমি আমার কিছু খুচখাচ কাজ চুকিয়ে দাও। আমি আমার যন্ত্রপাতির থলিটা তোমাকে উপহার দিতে চাই। আমি জানি, ওগুলো পেলে তুমি খুশি হবে। এক হাজার ডলার খরচ করেও ওগুলোর জুড়ি তুমি পাবে না। জানো বিলি, আমার পুরোনো ধান্দা আমি ছেড়ে দিয়েছিতা এক বছর হবে। আমি একটা চমৎকার দোকান পেয়েছি। আমি সৎ পথে থেকে রোজগার করছি। এখন থেকে দুসপ্তাহের মধ্যে দুনিয়ার সেরা মেয়েটিকে আমি বিয়ে করতে চলেছি। এটাই একমাত্র জীবন বিলিসোজাসাপটা জীবন। এখন লক্ষ লক্ষ ডলারের লোভেও আমি অন্য লোকের কানাকড়ি ছোঁব না। বিয়ের পর ব্যাবসাপত্র বেচে দিয়ে আমি চাই পশ্চিমে পাড়ি জমাতে, যেখানে পুরোনো অপরাধের কারণে আমার ওপর কোপ পড়ার বিপদ থাকবে না। সত্যি বলছি বিলি, সে একজন দেবদূতী সে আমাকে বিশ্বাস করে। গোটা বিশ্বের বিনিময়েও জীবনে কোনোদিন আর-কোনো অন্যায় কাজ আমি করব না। স্যুলির ডেরায় অবশ্যই এসো কিন্তু, কারণ তোমার সঙ্গে আমাকে দেখা করতেই হবে। আমি সঙ্গে করে যন্ত্রপাতিগুলো নিয়ে যাব।

তোমার পুরোনো বন্ধু, জিমি। জিমি চিঠিটা লেখার পর সোমবার রাতে সকলের অলক্ষ্যে বেন প্রাইস ঘোড়ায় টানা গাড়ি করে এলমোরে এসে নামলেন। যতক্ষণ না তিনি যা জানতে চাইছিলেন তা জানতে পারলেন ততক্ষণ তিনি ধীরে সুস্থে শহর ঘুরলেন। স্পেনসারের জুতোর দোকানের উলটোদিকের রাস্তায় অবস্থিত একটা ওষুধের দোকান থেকে তিনি র‍্যাফ ডি. স্পেনসারকে ভালো করে দেখে নিলেন। তাহলে, ব্যাংক মালিকের মেয়েকে বিয়ে করতে চলেছে, তাই না জিমি?” খুব আস্তে নিজের মনে বললেন বেন প্রাইস। যাক্ গে, আমি জানি না!পরের দিন, সকালে জিমি প্রাতরাশ সারল অ্যাডামসদের ওখানে। ওই দিনই তাকে লিটল রকে যেতে হবে তার বিয়ের পোশাকের বায়না দিতে আর অ্যানাবেলের জন্যে সুন্দর কিছু উপহার কিনতে। তার এলমোরে আসার পর এই প্রথম সে শহরের বাইরে যাচ্ছিল। তার আগের পেশার কাজগুলোর পর এক বছরেরও বেশি সময় কেটে যাওয়ায় জিমি ভেবেছিল সে নিরাপদে বাইরে যেতে পারে। রীতিমতো একটা পারিবারিক দল একসঙ্গে চলল শহরের কেন্দ্রভূমিতেমি. অ্যাডামস্, অ্যানাবেল, জিমি, অ্যানাবেলের বিবাহিতা বোন ও তার দুই কন্যাযাদের একজনের বয়স পাঁচ, অন্য জনের নয়তাদের সঙ্গে নিয়ে। তারা এল সেই হোটেলে যেখানে জিমি তখনও থাকত এবং সে দৌড়ে তার ঘরে গিয়ে তার সুটকেসটা নিয়ে ফিরল। তারপর তারা গেল ব্যাংকে। সেখানে জিমির ঘোড়ার গাড়ি আর চালক ডল্ফ গিবসন অপেক্ষা করে ছিল তাকে রেল স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সকলে খোদাই করা ওক কাঠের তৈরি উঁচু রেলিং পেরিয়ে ব্যাংকের ভেতরে ঢুকল, জিমিও ছিল তাদের সঙ্গে কারণ মি. অ্যাডামস্-এর হবু জামাই ব্যাংকের সর্বত্র স্বাগত । কেরানিরা খুশি হল যখন এই প্রিয়দর্শন, অমায়িক যুবকটি, যে কিনা মিস অ্যানাবেলকে বিয়ে করতে চলেছে, সকলকে অভিবাদন জানাল। জিমি তার সুটকেসটা নামিয়ে রেখেছিল। অ্যানাবেল, যার মনটা সুখে আর যৌবনের প্রাণোচ্ছ্বলতায় টগবগ করছিল, জিমির টুপিটা পরে নিল, আর তুলে নিল জিমির সুটকেসটা। আমি বেশ ভালো বিক্রেতা হতে পারি, তাই না?” অ্যানাবেল বলে উঠল, “উরি বাব্বা! র‍্যাফ এটা কি ভারী গো! মনে হচ্ছে এটা সোনার ইটে ভরতি।জিমি নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল, “প্রচুর নিকেল করা শু- হর্ন ওটার মধ্যে আছে, যেগুলো আমি ফেরত দেব। ভেবেছিলাম সঙ্গে করে নিয়ে গেলে বহন খরচটা বাঁচবে। আজকাল আমি ভয়ানক হিসেবি হয়ে যাচ্ছি।এলমোর ব্যাংক সদ্য একটা নতুন সিন্দুক এবং সিন্দুকঘরের ব্যবস্থা করেছে। ওটা নিয়ে মি. অ্যাডামস্ খুবই গর্বিত। সবাইকে তিনি ওটা দেখার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। সিন্দুকঘরটা ছোটো কিন্তু এটাতে পেটেন্ট প্রাপ্ত নতুন দরজা লাগানো ছিল। এটা আটকানো হত তিনটে নিরেট ইস্পাতের তৈরি ছিটকিনির সাহায্যে যেগুলি একই সঙ্গে একটামাত্র হাতল দিয়ে খোলা বা বন্ধ করা যেত আর ছিল একটি সময়-চালিত তালা। মি. অ্যাডামস্ হাস্যোজ্জ্বল মুখে মি. স্পেনসারকে সিন্দুকঘরটির কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলছিলেন। স্পেনসার এমনভাবে আগ্রহ প্রকাশ করল যেটা সৌজন্যসূচক কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত নয়। দুটি শিশু মে এবং আগাথা খুব আনন্দ পেল ঝকঝকে ধাতু, মজার ঘড়ি আর সিন্দুকঘরের হাতলগুলি দেখে। তারা যখন এই নিয়ে ব্যস্ত, বেন প্রাইস অলস গতিতে ভেতরে ঢুকলেন এবং কনুইয়ে ভর রেখে অনাগ্রহী দৃষ্টি মেলে রেলিং-এর ফাঁক দিয়ে ব্যাংকের ভেতরে চেয়ে রইলেন। ব্যাংকে টাকা লেনদেনরত ব্যাংককর্মীকে তিনি জানিয়ে দিলেন তাঁর নিজের কোনো প্রয়োজন নেই, শুধু তাঁর পরিচিত এক ব্যক্তির জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন। হঠাৎ মহিলাদের মধ্য থেকে একটা আর্তনাদ শোনা গেল এবং একটা শোরগোল হল। বড়োদের অগোচরে নবছরের মে খেলাচ্ছলে বোন আগাথাকে সিন্দুকঘরের মধ্যে আটক করে ফেলেছিল। তারপর অর্গলগুলো বন্ধ করে সংকেত সূত্রওয়ালা হাতলটা ঘুরিয়ে দিয়েছিল, ঠিক যেমনটা সে মি. অ্যাডামকে করতে দেখেছিল। বৃদ্ধ ব্যাংকার মহাশয় তড়াক করে লাফ নিয়ে উঠে হাতলটা ধরে এক মুহূর্ত টানাহেঁচড়া করলেন। তারপরই তিনি ককিয়ে উঠলেন, “দরজাটা খোলা যাবে না। ঘড়িটাতে দম দেওয়া হয়নি, আর সিন্দুকের তালা খোলার সংকেত নম্বরও সাজানো হয়নি।হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রোগীর মতো আগাথার মা আবার আর্তনাদ করে উঠল। তাঁর কাঁপতে থাকা হাতখানি তুলে মি. অ্যাডামস্ বললেন চুপ! এক মুহূর্ত সবাই একটু শান্ত হও।তাঁর পক্ষে যতটা জোরে চেঁচানো সম্ভব তত জোরে চেঁচিয়ে তিনি ডেকে উঠলেন, “আগাথা! আমার কথা শোনো।এর পরবর্তী নিস্তব্ধতার মাঝে সিন্দুকঘরের অন্ধকারের ভয়ার্ত, ক্ষ্যাপার মতো চিৎকার করতে থাকা বন্দি শিশুটির আর্তনাদের মৃদু ধ্বনি তাঁদের সকলের কানে এল। ওরে আমার মানিক রে!মা বিলাপ করে উঠল, “ও তো ভয়ে মরে যাবে! দরজাটা খুলে দাও! ওটা ভেঙে ফেলো! তোমরা পুরুষ মানুষরা, কিছু একটা করতে পার না?” কাঁপা স্বরে মি. অ্যাডামস্ বললেন, “লিটল রকের থেকে আগে থাকে, এমন কোনো লোক নেই যে ওই দরজাটা খুলতে পারে। ওঃ ভগবান ! স্পেনসার, আমরা কী করব, বলতে পার? ওই বাচ্চাটাসে খুব বেশিক্ষণ ওখানে থাকতে পারবে না। ভেতরে যথেষ্ট পরিমাণ বাতাস নেই। তা ছাড়া, আতঙ্কে তো ওর খিঁচুনি শুরু হয়ে যাবে।

আগাথার মা এবার পাগলের মতো তার হাত দুটো দিয়ে ভল্টের দরজায় ঘা দিতে লাগল। কেউ একজন উদ্‌ভ্রান্তের মতো প্রস্তাব দিলডিনামাইট। অ্যানাবেলের বড়ো বড়ো চোখ দুটি তখনো হতাশায় ভরে না উঠলেও বেদনামথিত তার দৃষ্টি। সে চোখ মেলে তাকাল জিমির দিকে। একটি মেয়ের কাছে, তার সশ্রদ্ধ অনুরাগের স্পর্শ পাওয়া পুরুষটির ক্ষমতার সামনে অসাধ্য বলে কিছু নেই। তুমি কিছু করতে পার না র‍্যাফ ? চেষ্টা করে দেখ না। করবে না?” তার ঠোটে এবং শাণিত চক্ষু দুটিতে এক অদ্ভুত নরম হাসি মাখিয়ে সে তাকাল অ্যানাবেলের দিকে। সে বলল, “অ্যানাবেল, যে গোলাপটা তুমি পরে রয়েছ ওটা আমাকে দাও। কি, দেবে তো?” অ্যানাবেল বিশ্বাস করতে পারছিল না র‍্যাফের কথা সে ঠিক শুনেছে কিনা। তবু সে গোলাপ কুঁড়িটা পোশাকের বুকের কাছ থেকে খুলে নিয়ে তার হাতে দিল। জিমি সেটা গেঞ্জির পকেটে ঢোকাল। তারপর কোটটা খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তার শার্টের আস্তিন গুটিয়ে নিল। ওই কাজের সঙ্গে র‍্যাল্ফ ডি. স্পেনসারের মৃত্যু হল আর তার জায়গা নিল জিমি ভ্যালেনটাইন। খুব সংক্ষেপে সে নির্দেশ দিল, “আপনারা সবাই দরজার সামনে থেকে সরে যান।সে তার সুটকেসটা টেবিলের ওপর রেখে সেটাকে হাট করে খুলে ফেলল। মনে হল সেই সময় থেকে সে সেখানে অন্য কারোর উপস্থিতির কথা ভুলে গেল। কাজ করার সময় তার অভ্যাস মতো সে মৃদু শিস দিতে দিতে খুব দ্রুত এবং সুশৃঙ্খলভাবে ঝকঝকে যন্ত্রপাতিগুলি বিছিয়ে দিল। গভীর স্তব্ধতায় নিশ্চল হয়ে অন্য সকলে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কাজ দেখতে লাগল। এক মিনিটের মধ্যে জিমির সাধের তুরপুন স্টিলের দরজায় মসৃণভাবে কামড় বসাতে লাগল। দশ মিনিটেতার আগের সিন্দুক ভাঙার সব রেকর্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়ে সে ছিটকিনিগুলিকে সরিয়ে দিয়ে দরজাটা খুলে ফেলল। প্রায় এলিয়ে পড়া কিন্তু নিরাপদে থাকা আগাথাকে তার মা দুহাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিল। জিমি ভ্যালেনটাইন তার কোটটা পরে নিয়ে রেলিং পেরিয়ে সামনের দরজার দিকে হেঁটে গেল। যেতে যেতে তার মনে হল সে বুঝি শুনতে পাচ্ছে অনেক দূর থেকে ভেসে আসা তার এক সময়ের পরিচিত এক কণ্ঠের আহ্বান, “র‍্যাল্ফ!কিন্তু সে একটুও ইতস্তত করল না। দরজার মুখে এক বিশাল চেহারার মানুষ তার পথ আগলে দাঁড়িয়েছিল। আরে, বেন ! তার মুখে তখনও সেই অদ্ভুত হাসির রেশ, “শেষপর্যন্ত ঘুরতে ঘুরতে ঠিক চলে এসেছেন। চলুন, যাওয়া যাক। জানি না, এখন আর এতে কিছু যায় আসে কিনা।ঠিক তখনই বেন প্রাইস এক অদ্ভুত কাণ্ড করে বসলেন। তিনি বললেন, “মনে হয়, আপনার ভুল হচ্ছে মি. স্পেনসার। আমি তো আপনাকে চিনি বলে মনে হচ্ছে না। আপনার ঘোড়ার গাড়ি আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে, তাই না?” এই বলে বেন প্রাইস মুখ ঘুরিয়ে রাস্তা ধরে হেঁটে চলে গেলেন।

No comments:

Post a Comment

IX MILD THE MIST

  Mild the Mist Upon the Hill  Emily Jane Bronte (1818 -1848) was an English poet and novelist, best remembered for her only novel, Wuth...