A Ghostly Wife
Folk Tales Of Bengal
কোনো এক সময় এক ব্রাক্ষ্মণ ছিল যে বিয়ে
করেছিল। তার স্ত্রীকে নিয়ে ব্রাক্ষ্মণ তার মায়ের সাথে একই বাড়িতে থাকত। তার
বাড়ির কাছে একটা পুকুর ছিল, পুকুর পাড়ে একটি
গাছ ছিল। সেই গাছে একটি ভূত বাস করত, সে ছিল শাঁখচুন্নি। একদিন রাতে ব্রাহ্মণের স্ত্রী কোনো কাজে পুকুর
পাড়ে যাচ্ছিল, না দেখে সে শাঁখচুন্নিকে ছুঁয়ে ফেলে। তৎক্ষণাৎ শাঁখচুন্নি
ব্রাহ্মণের স্ত্রী-এর ওপর ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে তার গলা টিপে ধরে এবং তাকে নিয়ে সেই
গাছের ওপর চড়ে এবং গাছের একটি কোটরে তাকে পুরে রাখে। ভয়ে মহিলাটি অর্ধমৃত
অবস্থায় পড়ে থাকে। ভূতটি তখন মহিলার কাপড় পরে ব্রাহ্মণের বাড়িতে যায়।
ব্রাক্ষ্মণ বা তার মা কেউই এই পরিবর্তনের কথা বুঝতে পারে না। ব্রাক্ষ্মণ মনে করে
তার স্ত্রী পুকুর থেকে ফিরে এসেছে আর তার মা ভাবেন এই তার পুত্রবধূ। পরদিন সকালে
শাশুড়ি তার পুত্রবধূর মধ্যে কিছু পরিবর্তন আবিষ্কার করেন। তিনি জানতেন তাঁর
পুত্রবধূ রোগা ও শারীরিকভাবে দুর্বল, তাই বাড়ির কোনো কাজ করতে তার অনেকটা সময় লাগত। কিন্তু এখন সে
যেন কেমন অন্যরকম হয়ে গেছে। হঠাৎ করে সে অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে, খুব অল্প সময়েই এখন সে বাড়ির কাজকর্ম সেরে ফেলছে। কোনো কিছু
সন্দেহ না করায় বৃদ্ধ মহিলা তাঁর ছেলে বা ছেলের বউকে কিছু বললেন না। উল্টে তিনি
মনে খুশি হয়ে ভাবলেন তাঁর পুত্রবধূ পালটে গেছে। কিন্তু তাঁর এই চমক দিনে কে অনেক
কম দিনে বাড়তে লাগল। আগের থেকে অনেক কম সময়ে বাড়ির রান্নাবান্না
হয়ে যেত। যখন শাশুড়ি মা তাকে পাশের ঘর থেকে কিছু আনতে বলতেন সেটা হেঁটে গিয়ে
নিয়ে আসতে যা সময় লাগত, তার থেকে অনেক কম
সময়ে সে নিয়ে আসত। ভূতেরা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বড়ো বা ছোটো করতে পারে—তাই ভূতটি অন্য ঘরে না গিয়েই তার হাতটি লম্বা করে সেখান থেকে
জিনিসগুলি নিয়ে আসতে পারত। একদিন বৃদ্ধা এই বিষয়টি লক্ষ করলেন। বৃদ্ধা তাকে কিছু
দূর থেকে একটা বাসন আনার আদেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু ভূতটি অচেতনভাবে তার হাতটি লম্বা করে নিমেষের মধ্যে সেই
বাসন এনে দিল। এই ঘটনা দেখে বৃদ্ধা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। তিনি তাকে (ভূতকে)
কিছু বললেন না কিন্তু এই ব্যাপারটি তার ছেলেকে জানান। তারপর থেকেই মা ও ছেলে ভূতের
ওপর আরও সতর্কভাবে নজর রাখতে শুরু করল। একদিন বৃদ্ধা রান্নাঘরে উনুনের আগুন জ্বলতে
দেখে অবাক হলেন। বৃদ্ধা জানতেন যে বাড়িতে জ্বালানি ছিল না; আবার তাঁর পুত্রবধূ বাড়ির বাইরেও যায়নি জ্বালানি আনতে।
শাশুড়ি মা রান্না ঘরে গেলেন এবং অবাক হয়ে দেখলেন যে তাঁর পুত্রবধূ রান্না করার জন্য কোনো জ্বালানি
ব্যবহার করছিল না, বরং সে তার পা
জ্বলন্ত উনুনে ঢুকিয়ে দিয়েছে। বৃদ্ধা মা যা দেখেন সব তাঁর ছেলেকে বলেন এবং
দুজনেই উপলব্ধি করে যে বাড়িতে যেই যুবতীটি রয়েছে সে ব্রাহ্মণের আসল স্ত্রী নয়, সে নিশ্চিত একটি পেতনি। তার মা ভূতের যেই কাণ্ডকারখানাগুলি লক্ষ
করেছিলেন, ছেলেও তা চাক্ষুষ করে। একজন ওঝাকে ডাকা হল। ওঝা এসেই পরীক্ষা
করতে চাইল যে সে একজন মানুষ নাকি ভূত। এই পরীক্ষাটি করার জন্য সে এক টুকরো হলুদে
আগুন লাগিয়ে সেটি মেয়েটির নাকের নীচে ধরল। এটি এক অব্যর্থ পরীক্ষা কারণ কোনো
ভূতই, তা সে পুরুষ বা মহিলা, পোড়া হলুদের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। যেই হলুদ টুকরোয় আগুন
দিয়ে মহিলার কাছে আনা হল, সে চিৎকার করে ঘর
থেকে ছুট দিল। এখন স্পষ্টই বোঝা গেল সে হয় ভূত নয়তো ভূতে তার ওপর ভর করেছে।
মহিলাটিকে চেপে ধরা হল এবং তার পরিচয় জানতে চাওয়া হল। প্রথমদিকে সে কিছুই বলতে
চাইছিল না, এই অবস্থায় ওঝা তাঁর চটি জোড়া খুলে তাকে আপাদমস্তক পেটাতে
শুরু করে। মার খেয়ে ভূতটা সব ভূতেদের মতো নাকি সুরে কথা বলে উঠল। সে স্বীকার করল
যে সে একজন শাঁখচুন্নি এবং সে পুকুর পাড়ের গাছে থাকে, সে এটাও জানাল যে সে ব্রাক্ষ্মণীকে গাছের কোটরে ঢুকিয়ে রেখেছে
কারণ একদিন রাতে ব্রাহ্মণী তাকে ছুঁয়ে ফেলেছিল, গাছের কোটরে গেলেই তাকে পাওয়া যাবে। মহিলাটিকে গাছের কোটর থেকে
প্রায় আধমরা অবস্থায় নিয়ে আসা হয় এবং ভূতটিকে আবার জুতো পেটা করা হয়। ভূতটি
যখন প্রতিজ্ঞা করল যে সে আর কখনো ব্রাহ্মণ এবং তার পরিবারের কোনো ক্ষতি করবে না, তখন ওঝা তাকে মন্ত্রমুক্ত করে ছেড়ে দেয়। ব্রাক্ষ্মণের স্ত্রী
আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠে। এরপর ব্রাহ্মণ ও তার স্ত্রী অনেকদিন সুখে জীবনযাপন
করে ও তাদের অনেক সন্তান হয় ৷
– আমার কথাটি ফুরোল
নটে গাছটি মুড়োল।
==========BIJAN
SIR===========
No comments:
Post a Comment